সিলেট লালাখাল ভ্রমণ

সিলেটের সৌন্দর্য দেশের পর্যটনের সম্ভাবনা

লেখক: মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

অপরূপ সুন্দরের সম্মিলন রয়েছে আমাদের সোনার বাংলায়। বাংলাদেশের সৌন্দর্য নানা রকমভাবে ফুটে উঠছে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে। সেখানে সিলেটের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। সমগ্র সিলেটই সবুজে ঘেরা। প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই প্রকৃতির অপরূপে সৌন্দর্যের সঙ্গে মিল রেখে নিজেকে ফুটিয়ে তোলে। 

শীতকালে শীতের তীব্রতা যেমন থাকে, বর্ষায় উজানের পাহাড়ি ঢলে সুরমা-কুশিয়ারা-মনু নদীর পানি উপচে পড়া তীব্র স্রোতে স্রোতাস্বেনী হয়ে উঠে সুনামগঞ্জের হাওর-বাওড়সহ সব খালবিল। গ্রীষ্মে প্রখর রোদে মাঠ ঘাট চৌচির হয়ে ওঠার উপক্রম।

বর্ষায় সমগ্র সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কতভাবে নয়নাভীরাম হয়ে উঠতে পারে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝার উপায় থাকে না। হাওরগুলো পুরো যৌবনা হয়ে উঠে। চারিদকে কুল উপচে পানিতে টইটম্বুর থাকে। সুনামগঞ্জের হাওরের সৌন্দর্য কত না বিস্তৃত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠান হাওর ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করছে। যাতে সহজে সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে নিশ্চিন্তে।

বর্ষায় সিলেটের চা-বাগানের সবুজপাতাগুলো নিজেদেরকে বিকশিত করে তোলে। চা-বাগানের সবুজ যেন সব ভালোলাগাকে ছাপিয়ে তোলে। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’র সৌন্দর্য পরতে পরতে সাজিয়ে রাখে, সঙ্গে ছায়াবৃক্ষগুলো একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে যেন সবুজ চা-বাগানের সৌন্দর্যকেই পাহারা দিচ্ছে। এ যেন প্রকৃতির অনাবিল প্রশান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে সারা সিলেট জুড়ে। পুরো সিলেট জুড়েই রয়েছে প্রশান্তি মেশানো এই চা বাগান। কয়েকটি চা-বাগানের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, আদি অ-কৃত্রিম মালনীছড়া চা বাগান, যা ১৮৫৪ সালে যাত্রা শুরু করে।  রয়েছে অপার সৌন্দর্য বিছানো লাক্কাতুরা চা বাগান আর পুরো শ্রীমঙ্গল জুড়েই রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। দেশের একমাত্র টি রিসার্স ইন্সটিটিউট ও রয়েছে শ্রীমঙ্গলে।  

বর্ষার জলে কলকলতানে ছাপিয়ে বেড়ানো দেশের একমাত্র জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। সে যেন এক অনাবিল প্রশান্তির নাম। নানারঙ্গে, নানাঢঙ্গে ভালোবাসা লুকিয়ে সারা সিলেট জুড়েই রয়েছে নানা পর্যটন স্পট । জাফলং এর সৌন্দর্য যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সব সৌন্দর্য একসাথে ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে। একপাশে বিশালাকৃতির পাহাড় আর হিম ছড়ানো পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশি।

সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথে তামাবিল এ পাহাড় ঝর্ণা চা বাগান আর বাংলাদেশ-ভারত দু ‘দেশের বর্ডার লাইন সব কিছু একসঙ্গে দেখতে পাওয়া। যাত্রাপথে ডিবির হাওরে অসংখ্য লাল শাপলার মিলন মেলা যেন হাতছানি ডাকছে তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। অসম্ভব সুন্দর সেই দৃশ্য। আর চোখ মেলে দেখা দূর দূরান্তে বিশাল আকৃতির পাহাড় আর সরু ঝর্ণার জলধারা। যা মন ভালো করিয়ে দেবে যে কাউকে।

ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, লালাখালের নৌকাভ্রমণ যে কাউকে মুগ্ধ করে ছাড়বে। এ যেন প্রকৃতির সাথে আলিঙ্গন করে যাওয়া প্রতিমূহূর্তে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এ অবস্থিত হাকুালুকি হাওর আর পুরো সুনামগঞ্জ জুড়েই বিস্তৃত হাওর অঞ্চল যেন বৃহত্তর সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সিলেট লালাখাল ভ্রমণ
সিলেট ট্যুরিস্ট গাইড

মাধবকুণ্ডু, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় সারা বছর বয়ে চলে জলপ্রপাত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত অন্যতম এই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটকরা। আরেক সৌন্দর্য মাধবপুর লেক। ১৯৬৫ সালে চা বাগানের টিলায় বাঁধ দিয়ে এ লেক তৈরি করা হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রকৃতিপ্রেমিকদের কাছে অনন্য সুন্দর একটি স্থান।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি সিলেট শহরে প্রবেশ মুখের ক্বীন ব্রিজের কাছে অবস্থিত আলী আমজাদের ঘড়ি সিলেটের ঐতিহ্যকে লালন করে। একই শতাব্দীতে সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ গড়ে উঠে। যা সিলেটের ধর্মীয় শিষ্টাচার পরিপালনের ইতিহাসও উঠে আসে। হজরত শাহজালাল (রা.) ও হজরত শাহপরাণ (রা.) এর মাজার জিয়ারত করতে দেশ বিদেশ থেকে অনেকে সিলেটে আসেন। 

গৌড় গোবিন্দ ১৩০০ শতকের সিলেট অঞ্চলের খণ্ড রাজ্য গৌড়ের শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন ধার্মিক। ধর্ম পালনে ছিলেন কঠোর । রাজা গৌড় গোবিন্দ টিলা দেখার জন্যও অনেক হিন্দু ধর্মালম্বীরাও সিলেট ভ্রমণ করেন।

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্ম বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়। বাউল সম্রাটের স্মৃতি বিজড়িত সংস্কৃতির পরিমণ্ডল দর্শনেও আসে অনেকে।

সিলেটের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে পর্যটকরা সহজেই সিলেট ভ্রমণ করে থাকেন। আকাশপথ, সড়কপথ, রেলপথ সব মাধ্যমেই সিলেটে যোগাযোগ করা যায়। সিলেট শহর থেকে খুব সহজেই সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত করা যায়। সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যেখানে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তাসহ আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের তীর্থস্থান খ্যাত সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক। যা দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *